শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার জাল সনদ নিয়ে চাকরি নেওয়ার পরেও আইনের চোখের ফাঁকিতে রয়েছে কলেজ শিক্ষক মালেকা খাতুন। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর সহকারী পরিচালক (পমূপ্র-৩) তাজুল ইসলামের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এক বৎসরেও হয়নি তার বিরুদ্ধে মামলা।

কলেজের গভর্ণিং বডির সভায় জাল সনদধারী শিক্ষক মালেকা খাতুনসহ ১৪ জন প্রভাষকের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ না থাকা সত্ত্বেও আইনের পরিপন্থী নিয়োগ দেওয়ায় তাদেরকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু তাদেরকে কাগজে কলমে অব্যাহতি দিলেও খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কলেজে কর্মরত রাখা হয়েছে এবং তাদের বেতন ভাতাও সঠিক সময়ে দেওয়া হচ্ছে।

তারা হলেন -মালেকা খাতুন, সাহিদা আলম, ফারুক হোসেন ও নাজমুন নাহার প্রভাষক, রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ, মনীরা পারভীন ও রোকসানা ইসলাম, প্রভাষক, সমাজ কর্ম বিভাগ, ফারলিন সরকার ও মনীষা আক্তার, প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, রফিকুল ইসলাম, প্রভাষক, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ, আব্দুল মজিদ প্রভাষক, ইতিহাস বিভাগ, সাবরিন ইসলাম, প্রভাষক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, সাওদা ইসলাম, প্রভাষক, ব্যবস্হাপনা বিভাগ, শারমিন সুলতানা, প্রভাষক, মার্কেটিং বিভাগ, ও জিন্নাত নূরে জান্নাত প্রভাষক, অর্থনীতি বিভাগ।

জাল সনদের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মালেকা খাতুন কাজীপুর উপজেলার মাজনাবাড়ী গ্রামের এম.ডি আব্দুল জলিল মন্ডলের কন্যা।

তিনি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার জাল সনদ দিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ।

অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রভাষক বলেন,আমরা এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আমাদেরকে কলেজ অংশের বেতন দেওয়া হচ্ছে না।আমাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, এনটিআরসিএ এর প্রভাষক (রাষ্ট্র বিজ্ঞান) এর সনদ জাল করে মালেকা খাতুন ২০১১ সালে সরিষাবাড়ী মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স শাখায় প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তার জাল সনদের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সমালোচনা শুরু হয়।

অবশেষে কলেজ কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ মালেকা খাতুনের দাখিলকৃত নিবন্ধন সনদ যাচাই করেন। যাচাইঅন্তে এনটিআরসিএ’র সহকারী পরিচালক (পমূপ্র-৩) তাজুল ইসলাম ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং ৩৭.০৫.০০০০.০১০.০৫.০০২.২০.১৭২৭ নং স্মারকে সংশ্লিষ্ট কলেজে পত্র প্রেরণ করেন।

ওই পত্রে প্রভাষক মালেকা খাতুনের জমা দেওয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল ও ভূয়া বলে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করার জন্য অধ্যক্ষকে নির্দেশনা দেন ও অফিসার ইনচার্জ, সরিষাবাড়ী থানাকে অনুলিপি দেন ।

এনটিআরসিএ’র পত্র সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক মালেকা খাতুনের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা পাশের সনদটি ৪র্থ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা- ২০০৮ এর রোল নং ২০৩১৩২৮৪ এবং রেজিষ্ট্রেশন নং ৮০০১৫২৬৬ কিন্তু অনুত্তীর্ণ।তবে এ ব্যাপারে মালেকা খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান আমি এখনো সরিষাবাড়ী মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজে কর্মরত আছি।আমি একজন মহিলা মানুষ যাতে আমার সমস্যা না হয় বিষয়টি দেখবেন।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সরিষাবাড়ী মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নূরুন নাহার জানান, এনটিআরসিএ এর পত্রের প্রেক্ষিতে গত ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ গভর্ণিং বডির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জাল ও ভূয়া সনদধারী প্রভাষক মালেকা খাতুনসহ অনার্স শাখায় কর্মরত শিক্ষক নিবন্ধন সনদ বিহীন ও আইনের পরিপন্হী নিয়োগ দেওয়ায় ১৪ জনকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তারা যেহেতু আমাদের শিক্ষকই না। অহেতুক কেন ভেজালে যাব? আগের কমিটি নিয়োগ দিয়েছেন কিভাবে দিয়েছেন তা আমি জানি না।এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে আরো জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, পারিপার্শ্বিকতা ও সামাজিকতা রক্ষার স্বার্থে তাদেরকে খন্ড কালীন হিসেবে রাখা হয়েছে।

যেহেতু এতগুলো শিক্ষক একবারে চলে গেলে ক্লাসের সমস্যা হবে। এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক জানান,এ বিষয়ে আমার জানা নেই।অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়া হবে।